আবিষ্কারের নেশা' ধারাবিহিকটি ভিন্ন স্বাদের এক স্বাধীন চেতা আধুনিক তরুণীর গল্প ।  আজকালকার সমাজের  বিবাহ প্রথায় তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন মেয়েদের বিয়ে ছাড়া যথেষ্ট কাজ আছে সমাজের জন্য দেশের জন্য।

আবিষ্কারের নেশা


নাইবা হলাম কলির কেষ্ট ~ তোমার জন্য নয় করবো কষ্ট!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে।
খাওয়া শেষ করে অয়ন শালিনীকে ছেড়ে আসে কোরমঙ্গালা অবধি ট্যাক্সিতে।
রাস্তায় অনেক কথা হয়। শালিনীর পোষ্ট ডক্টরেট এর জন্য ফেলোশিপ। রিসার্চ এর স্কোপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অয়ন এখন বেঙ্গালুরুতেই থাকে নতুন কোম্পানিতে। মাঝে মাঝে চেন্নাই , দিল্লী জায় কোম্পানির কাজে।
শালিনী এখন আর অয়ন কে অপছন্দ করেনা কেন নিজেই জানেনা। আসলে বন্ধু হিসেবেই ওকে গ্রহণ করেছে। নিজের মনকে বোঝায় বন্ধুত্বতে দোষ কি?
ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর সব সময় ব্যস্ত থাকেন নিজের রিসার্চ নিয়ে। শালিনীকে গাইড করছেন একটা নতুন বিষয় নিয়ে কার্বন নেনো টিউব বেসড সেন্সার্স। বেশ কিছু তথ্য ভিত্তিক কনফারেন্স এবং সিম্পোজিয়াম এর মধ্যে সময় কাটে সকলের। পরিবেশটা সরস্বতীর আরাধনা ছাড়া কিছু নেই। যে যার রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত। খাওয়ার সময় থাকেনা এদের। এরা এতোই মসগুল হয়ে থাকে রিসার্চ নিয়ে। শালিনী জীবনে অনেক রিসার্চ করলো। নতুন কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টের টাকা এই বছর শেষ। এর পর কি?
হঠাৎ অয়নের ফোন। হ্যালো! বল অয়ন।
আজ শনিবার আমার অফিস ছুটি।
কিন্তু আমার নয়।
জানি , ছুটি নাওনা!
হুম দেখছি। “আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ প্রায় শেষ। এবার বাড়ী যেতে হবে। ফেলোশিপের টাকা আর পাবো না। আবার সেই মায়ের ঘেন ঘেনানি”। কথাগুল্প মনে মনে ভাবে শালিনী।
কি হল? উত্তর দিচ্ছ না কেন?
অয়ন তোমাকে একটা কথ বলি। তুমি কিছু মনে করবে না বল।
ঠিক আছে বল। আচ্ছা কথাটা না হয় দেখা হলেই বলবে। আমি আসছি তোমাকে নিতে।
মানা করতে পারলো না শালিনী। কিছু একটা অলস আবেগের বসে বলে বসে “ঠিক আছে এস কিন্তু রাত করতে পারবোনা ”।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন এসে হাজির।
চল।
কোথায়?
চলইনা।
‘আই-নক্স’ এ SANDLER BARRYMORE ‘BLENDED’।
হলে সিনেমা দেখতে দেখতে পপ কর্ন খাচ্ছিল দুজনে। আজ জেন শালিনী জীবনের সব বাঁধন থেকে মুক্ত। নিজেকে হারিয়ে দিতে চায় অয়নের কাছে। কিন্তু তাতে শালীনতা থাকা প্রয়োজন।
হঠাৎ বেড় রুম সিন শালিনীকে বিব্রত করে। নায়িকার অনাবৃত বক্ষ যুগল আর ঘন ঘন চুম্বনের দৃশ্য অয়নকেও কিছুটা উত্তেজিত করে ফেলে।
শালিনীর হাত অজান্তে স্পর্শ করে ফেলে।
শালিনী হাত সরিয়ে নেয় এবং উঠে পড়ে বলে , “চল রাত অনেক হয়েছে আমার আর ভালো লাগছেনা”।
সেকি! মাঝ খান থেকেই চলে যাবে?
হ্যাঁ যেতেই হবে লোকের সামনে অসভ্যতামি আমি পছন্দ করি না। তোমার জানা উচিত ছিল। চোখথেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছিল।
কিছু সিন ক্রিয়েটের আগেই অয়ন বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে।
অয়ন বিব্রত বোধ করে। বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করে। শেষে শালিনী আর ও উঠে পড়ে একটা ট্যাক্সিতে। কিন্তু একি! শালিনী সামনের সিটে ড্রাইভারের কাছে বসে!!
রাস্তায় কোন কথাই হয় না। অয়ন অপরাধীর মত পেছনে চুপটি করে বাধ্য ছেলের মত বসে-পড়ে। মনে মনে ভাবে এই মহিলার জেদ ভাঙ্গতেই হবে। এটা তারকাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। কিন্তু এই মহিলা অন্যদের মত সোজা সরল নয়। এরমধ্যে সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা নেই। রুক্ষ বাস্তব ধর্মী এক অহংকারী মহিলা। এর কাছে কামনা বাসনা প্রাধান্য পায়না। তবে কি সত্যি তাই? আরও ভেতোরে ঢুকতে হবে বুঝতে হবে। সে যে ব্যাপার টা করলো তাতে ভুল থেকে গেল। এখন হয়তো শালিনী আর কথা বলবে না কিছুদিন।
শালিনীর বাসা এসে-গেল। গাড়ী-থেকে নেবে ড্রাইভারের হাতে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলে “ভাই সাব মিটারে কিত্না হুয়া”?
৯০ রুপিস মাদাম। ঠিক হ্যায় রখ লিজিয়ে।
অয়নকে গুড নাইট বলে নেবে গট গট করে হেঁটে যায় উত্তরের অপেক্ষা না রেখে।
অয়নও ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।


৩য় পর্ব
এখানকার কাজ শেষ। বাড়ী ফেরার তাড়া। ইয়শোওন্তপুর হাওড়া সুপারফাষ্ট এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে। শালিনী একাই ফিরছে ২ এসি কোচে। সঙ্গে একটা ট্রলি ব্যাগ আর কিছু ছোট খাটো জিনিষ। খুব ব্যস্ত লাগছিলো। অনেকটা পথ কোরমঙ্গালা থেকে ইয়শোওন্তপুর ষ্টেশন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বগিতে উঠে। জিনিষ পত্র ঠিক জায়গায় রেখে একটা টাইম ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো। যে যার বার্থ এ উঠে বসছে। সামনের বার্থের এক ভদ্রমহিলা শালিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন “কোলকাতা যাবে বুঝি?”
হ্যাঁ। আপনি?
আমিও। সঙ্গে কেউ নেই?
‘না’ ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে ওলটাতে।
ও! আমিও একলা যাচ্ছি মা। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু কথা বলে সময় কাটাবো।
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। বলুন না।
আমি এখানে আমার ছেলে বৌ এর কাছে এসেছিলাম।
আপনার ছেলে কি করেন?
ছেলে বৌমা দুজনেই ইনফোসিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
ও তাই! ভালো।
তুমি?
আমি! আমি আপাতত কিছু করিনা।
তোমার বিয়ে হয়েছে?
কথাটা শুনেই শালিনী বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে। আমায় কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিতা?
না মা। জিগ্যেস করলাম বলে কিছু মনে করনা।
না না। আচ্ছা মাসিমা বিয়ে ছাড়া কি মেয়েদের কিছু কাজ নেই! বিয়ে না করে কি মেয়েরা সমাজের অন্য কোন ভালো কাজ করতে পারে না! আপনার কি মনে হয়।
কাজ তো অনেক আছে মা। কেউ এভারেস্ট অভিযানে যাচ্ছে , কেউ ক্রিকেট খেলছে , কেউ সাঁতার কাটছে , কেউ সিনেমা করছে .......
এগুলো সমাজের মঙ্গলের কাজ কিনা জানিনা তবে হ্যাঁ নাম যশের জন্য ঠিক আছে।
তুমি কি কিছুই কর না মা?
দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার? ... উল্টো প্রশ্ন শালিনীর।
কিছু একটা কর নিশ্চয়। কি কর মা?
কলেজে পড়াতাম এখন পড়াইনা। বেকার বলতে পারেন।.... ইচ্ছে করেই কিছু খুলে বলল না , আবার বিয়ের কথা না পেড়ে বসেন মহিলা। ম্যাগাজিনটায় চোখ বুলতে লাগলো। প্রত্যেক বয়স্কা মহিলাদের এই এক প্রশ্ন ; বিয়ে , ছেলে মেয়ে বিরক্ত লাগে এক ঘেয়ে কথা শুনতে। অন্য কোন প্রশ্ন নেই?
মহিলা , মনের মতন উত্তর না পেয়ে চুপসে গেলেন। উনিও একটা বোই বার করে মুখের সামনে ধরলেন।
খুব অলস লাগছিল শালিনীর। অনেকটা পথ এক টানা অটো তে। সেই সকালে বেরুন। ট্রেনে এসির ঠাণ্ডাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা। টি টি র ডাকে উঠে পড়ে।
টিকিট চেকিং এর পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সামনের মহিলাও ঘুমিয়ে পড়েন।
রাতে ট্রেনের জঘন্য খাবার খেতে রুচিতে বাধলেও উপায় নেই। ডিনারে , ভেজ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। আসলে জেগে থাকলেই ভদ্রমহিলার প্রশ্ন বাণে জর্জরিত হতে হবে। অহেতুক কথা বাড়বে তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।